রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সংগীতের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (পর্ব ২: বারোক যুগ, এন্টনিও ভিভালডি, জর্জ ফ্রেডরিক হ্যান্ডেল)

বারোক যুগ: আবেগময় কাল

মন্টেভার্ডি আর তাঁর অনুসারীরা সংগীতের নতুন যুগের পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আজকে তার নাম বারোক যুগ। 

বারোক যুগের সময়কাল ১৬০০-এর মাঝামাঝি থেকে ১৭০০-এর মধ্যকাল পর্যন্ত। এই সময়টা ছিলো নকশাদার আর আবেগ-প্রধান শিল্পকর্মের কাল, তাই এই সময়ের সংগীতেও ছিল তার প্রভাব। বারোক যুগের শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্মে নানাসূক্ষ্ণ নকশা দিয়ে ভরিয়ে তুলতেন।


বৃত্তের বাইরে যাবার কাল

বারোক সংগীত শোনার সময় মনে হয় যেন গানগুলো অত্যন্ত আবেগাক্রান্ত। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে অবশ্য এগুলোকে অপেক্ষাকৃত সংযত মনে হয়। কিন্তু, সেই সময়, ওইসব নকশাদার সুরের ওঠানামা দেখে সবার মনে হত গান বুঝি গোল্লায় গেছে। সংগীতকারেরা বিভিন্ন ধরনের কাঠামো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন, আগেরদিনের সমস্ত নিয়মকানুন ভেঙে ফেলেছিলেন তাঁরা।

রেনেসাঁ যুগের মাদ্রিগালে যে ওয়ার্ড-পেইন্টিঙের বিষয়টি জনপ্রিয় হয়েছিল সেটি বারোক যুগে নতুন মাত্রা পায় এবং আরও ছড়িয়ে যায়। আগে, দীর্ঘশ্বাস বোঝাতে গায়ক হয়তো উচুঁ থেকে নিচু স্বরে নেমে আসতেন। কিন্তু এইসময় সেই বিষয়টিই বাদ্যযন্ত্র দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়। শ্রোতারা বুঝতে পারতেন যে সুরের হঠাৎ উচুঁ থেকে নেমে আসা মানে দীর্ঘশ্বাস বোঝাচ্ছে, অথচ, সেইসব গানে কোনো কথা ছিল না, শুধু ছিল সুর। কথাবিহীন ওয়ার্ড-পেইন্টিং বারোক যুগের সংগীতের আবেগ প্রকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল।


রাজা, চার্চ এবং অন্যান্য অভিজাতদের ভূমিকা

আপনি আজ থেকে ৩০০ বছর আগের কোনো উঠতি শিল্পী হয়ে থাকলে সেইসময়কার কোনো ক্যারিয়ার কাউন্সিলর হয়তো আপনাকে হয়তো তিনটি জায়গায় কাজ খোঁজার জন্য পরামর্শ দিতেন: রাজার দরবারে, কোনো ধনী লোকের বাড়িতে অথবা কোনো খ্রিস্টান চার্চে।

সব বয়োজ্যেষ্ঠ নামকরা সংগীতকারেরা তখন এইরকম কাজ করতেন। এদের কারও কারও ভাগ্য আবার অন্যদের চেয়ে একটু বেশীই ভালো ছিল। কারণ অনেক বিখ্যাত সংগীতকার ছিলেন যাদেরকে দীর্ঘদিন ধনী লোকেদের বাড়িতে গৃহস্থালি কাজকর্ম করেই কাটাতে হয়েছিল। যেমন: জোসেফ সামারটিনি (আনুমানিক ১৭০০-১৭৭৫) ছিলেন ইতালিয় ওবোয়িস্ট, পৃথিবীর প্রথমদিককার কিছু সিম্ফোনির সংগীতকার এবং উদীয়মান উলফগ্যাং আমেদিউস মোৎসার্টের কাছে একজন বিরাট অনুপ্রেরণা। তিনি কী কাজ করতেন জানেন? তিনি প্রিন্স অফ ওয়েলসের ঘরে গৃহকর্মী প্রধান হিসেবে কাজ করতেন।


এন্টনিও ভিভালডি

বারোক যুগের ইতালিয় তারকা এন্টনিও ভিভালডি (১৬৭৮-১৭৪১) ক্যাথলিক চার্চে কাজ করতেন। এই লোকটি তাঁর কর্মজীবনে এই পৃথিবীর যেকোন সংগীতকারের থেকে বেশী সংগীত রচনা করেছেন। তাঁর ৫০টি অপেরা বাদেও রয়েছে ৪০টি অর্কেস্ট্রা-কয়্যার সংগীত। এছাড়া ১০০টি সংগীত শুধুমাত্র অর্কেস্ট্রার জন্যই তিনি লিখেছিলেন। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র একা বাজাবার জন্য তিনি প্রায় ৫০০ কনসার্টো রচনা করেছিলেন।

ভিভালডি
তখনকার দিনের ভিভালডির হিংসুটে সমালোচকরা বলতেন ভিভালডি নাকি একই জিনিস ৫০০ বার লিখেছিলেন। আজকের দিনেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। একজন মানুষ কোন দুঃখে একই জিনিস ৫০০ বার লিখবেন? এর কোনো ভিত্তি নাই। তবে, এরা বুঝাতে চান যে, ভিভালডির সংগীতে কোনো নতুনত্ব ছিল না। কিন্তু, ভিভালডির একটা নিজস্বতা ছিল। আর তাই তাঁর বিরুদ্ধে এই সমালোচনার তীর।

ভিভালডির বেড়ে ওঠা ভেনিসে। বয়স হবার পর তিনি যাজক হওয়ার জন্য মনস্থির করেন। এই সিদ্ধান্ত এবং সেইসঙ্গে তাঁর লম্বা লাল চুলের কারণে তাঁকে ডাকা হতো ‘দ্য রেড প্রিস্ট।’

কিন্তু ভিভালডি খুব বেশীদিন যাজকবৃত্তি করেননি। তাঁর দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। যেমন: একদিন মাস্-এর সময় তাঁর মাথায় একটা দুর্দান্ত সুর এলো। কোনো দ্বিধা না করে বা ক্ষমা না চেয়েই তিনি বেদী থেকে নেমে গেলেন এবং সুরটা লিখে ফেলার জন্য কাগজ খুঁজতে পাশের ঘরে দৌড়ে গেলেন। উপস্থিত সকলে একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিল এই ঘটনায়।

এই ঘটনায় ভিভালডিকে শাস্তির জন্য আদালতের মুখোমুখি হতে হয়ছিল। সৌভাগ্যক্রমে, বিচারক সেদিন খোশ মেজাজে ছিলেন। তাই রায়ে মেধাবীকে ছেড়ে দেওয়া হল। তবে, শাস্তি হিসেবে ভিভালডিকে আর কোনোদিন মাস্-এ যেতে দেওয়া হয়নি।


ওয়েওয়ার্ড গার্লস ফিলহারমোনিক

ভিভালডির পরের চাকরিটি ৩৫ বছর টিকেছিল এবং এখান থেকেই তিনি অবসরে যান। তিনি অসপেডালে ডেল্লা পিয়েতা (অর্থাৎ, ক্ষমার হাসপাতাল)-এর একজন বেহালা শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এটা ছিল এক অভূতপূর্ব প্রতিষ্ঠান। এটি ছিল একইসাথে একটা সংগীত সংরক্ষণাগার এবং অবৈধ মেয়ে বাচ্চাদের স্কুল।

বছরে বছরে, ভিভালডির ঘাড়ে একে একে ওই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত ভার এসে পড়তে লাগল। শেষপর্যন্ত দেখা গেল তিনিই প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। তিনি সপ্তাহান্তে কনসার্ট আয়োজন করতেন যেটা পরবর্তীতে ইউরোপ জুড়ে সুনাম কুড়িয়েছিল। যখনই তিনি তাঁর প্রিয় কোনো ছাত্রীর সংগীত দক্ষতা সকলকে দেখাতে চাইতেন, তখনই তিনি সেই ছাত্রীর বাজানোর জন্য একটা করে কনসার্টো লিখে ফেলতেন।

ভিভালডির কনসার্টোর তিনটি করে মুভমেন্ট বা অংশ থাকত, এবং সেগুলো নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করত। এই কাঠামোটিই পরে বারোক সংগীতকারদের কাছে অনেকটা মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তাঁর কাঠামোটা ছিল এরকম:

দ্রুত লয় - ধীর লয় - দ্রুত লয়


ভিভালডির সংগীত

আমি নিশ্চিত আপনারা কোথাও না কোথাও ভিভালডির সুর শুনেছেন, বিশেষ করে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত দ্য ফোর সিজনস। এটা হল চারটি কনসার্টোর একটা সেট যেটা অর্কেস্ট্রার সাথে বেহালা দিয়ে বাজাবার জন্য লেখা হয়েছিল। প্রতিটা কনসার্টো একটা করে ঋতুর বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে।

বসন্তের কনসার্টোটি পাখির গানের মত সুরে ভরা, সঙ্গে ঘনঘন মেঘেরচমক, ঘুমন্ত ভেড়ার পালের দিকে ক্রুদ্ধ কুকুরের ডাক, ভেড়াদের আনন্দনৃত্য আর পরীদের দিয়ে ভরা। আবার গ্রীষ্মকালের কনসার্টোটি শুনলে মনে হবে যেন উত্তপ্ত সূর্যের তাপ গায়ে এসে লাগছে। আরও মনে হবে যেন কোকিল ডাকছে, মশা কামড় দিচ্ছে আবার কখনো ঝড়ের তান্ডব বয়ে যাচ্ছে। শরতের কনসার্টো শুরু হয় মাতাল কৃষকের গান দিয়ে আর শেষ হয় বুনো শিকারের তান্ডব দিয়ে। সমস্তটা হান্টিং হর্ন বাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। আর, শীতের কনসার্টোটি শুনলে মনে হয় যেন জমে যাচ্ছি, কাঁপছি, পায়ে পা লেগে যাচ্ছে আর আগুন পোহাচ্ছি। পরক্ষণেই মনে হবে কে যেন আবার আমাকে বাইরে নিয়ে গেল, সামনে শুধুই হিম বরফ। সবমিলিয়ে একটু রূঢ় অবশ্যই। এইসব অনুভূতিই সংগীতের মধ্যদিয়ে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

ফোর সিজনস ব্যাপকভাবে সমাদৃত। অসংখ্য বিজ্ঞাপণ, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানে এটি ব্যবহৃত হয়েছে। ভিভালডির আরও কিছু উল্লেখযোগ্য সংগীত হল:

 

     Concerto for Guitar in D major, RV 93

     Concerto for Two Trumpets in C major, RV 537

     Sonata for Two Violins, in F major, RV 60

     Gloria (oratorio for three solo singers, chorus, and orchestra), RV 589

     Concerto for Two Cellos in G minor, RV 531

     Double Orchestra Concerto, RV 585

 

জর্জ ফ্রেডরিক হ্যান্ডেল

ভিভালডি যখন ভেনিসে বসে সংগীত রচনা করছিলেন, আরেকজন সংগীতকার তখন জার্মানি থেকে ইংল্যান্ডে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি হলেন জর্জ ফ্রেডরিক হ্যান্ডেল (১৬৮৫-১৭৫৯)। সমকালীন তো বটেই, তাঁর মৃত্যুপরবর্তী সংগীতের উপরেও ছিল তাঁর অগাধ প্রভাব।

হ্যান্ডেলের জন্ম জার্মানিতে কিন্তু তাঁর সংগীতে তালিম ইতালিতে। তারমানে, তিনিই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ইংরেজ সংগীতকারদের একজন। কিছুই বোঝা গেল না? বাদ দিন, আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

হ্যান্ডেল
আসলে, কাহিনীটা অন্য জায়গায়। হ্যান্ডেলের বাবা ছিলেন একজন জার্মান নাপিত-ডাক্তার (তখনকার দিনে নাপিতেরা কিঞ্চিৎ ডাক্তারিও করতেন)। বাবার সাথে থেকে থেকে লোকের উপর ডাক্তারি করতে করতেই জর্জ ফ্রেডরিক একসময় অর্গানে বসে যান। আঠারো বছর বয়সে বড় শহর হামবুর্গে যাবেন বলে ঘর ছাড়েন। সেখানে তিনি সংগীতকার এবং শিল্পী হিসেবে কাজও পেয়ে যান।

হ্যান্ডেল জানতেন যে পুরো ইউরোপ জুড়ে অচিরেই ইতালিয় অপেরার জয়জয়কার হবে। আর তাই বাইশ বছর বয়সে তিনি ইতালিয় ঘরানার সংগীত শিখতে ইতালি চলে যান। সেখানে তাঁর দেখা হয় সেখানকার মহাতারকা এন্টনিও ভিভালডির সাথে। তাঁর কাছ থেকেই কনসার্টোয় হাতেখড়ি। এরপর অল্প সময়ের জন্য জার্মানি ফিরেই হ্যান্ডেল চিরতরে লন্ডনে পাড়ি জমান।

ইংল্যান্ডে গিয়ে তিনি ৩৬টি অপেরা লেখেন যেগুলোর বেশীরভাগই মাস্টারপিস। কিন্তু লোকের পছন্দ পাল্টাচ্ছিলো। সেইসময়ের জনপ্রিয় ধারা ছিল বাইবেলের গল্প থেকে বানানো গান বা ওরাটরিও। হ্যান্ডেল বুঝতে পারলেন এবং তিনিও ওরাটরিও লেখা শুরু করলেন। ওরাটরিও হলো এক ধরনের গান যার কথাগুলো নেওয়া হতো বাইবেল থেকে আর কোনো গায়ক একা খালি গলায় বা কোরাসের সঙ্গে বা অর্কেস্ট্রার সাথে তা গাইতেন।

এইসব ওরাটরিওর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলো মেসিয়াহ। এটি প্রথম বাজানো হয় ১৭৪২ সালে। মেসিয়াহ’র জনপ্রিয়তার কথা বলতে হলে বলতে হয় এটি এতোই জনপ্রিয় হয়েছিলো যে পুরুষ শ্রোতাদের অনুরোধ করা হতো তারা যেন তাদের তরবারি ঘরে রেখে এটা শুনতে আসেন এবং নারী শ্রোতারা যেন তাঁদের হুপগুলো খুলে রেখে আসেন, যাতে বেশী মানুষকে ঢুকতে দেওয়া যায়।

প্রচণ্ড মেধাবী হ্যান্ডেল তাঁর মেজাজের কারণেও বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর তিরিক্ষ মেজাজের কথা সংগীত মহলে ছড়িয়ে পড়েছিলো এবং তিনি অচিরেই হাসি-ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। যেমন: সর্বজনবিদিত যে, হ্যান্ডেল বাদ্যযন্ত্র টিউন করার শব্দ সহ্য করতে পারতেন না। কাজেই যখন তাঁর কনসার্ট থাকতো, তখন সকল যন্ত্রীদের প্রতি তাঁর নির্দেশ থাকতো যেন তিনি মঞ্চে ওঠার আগেই সব বাদ্যযন্ত্র ঠিকঠাক টিউন করে রাখা হয়।

একবার এক সন্ধ্যায় এক দুষ্টু লোক লুকিয়ে থিয়েটারে ঢুকে পড়ে এবং কনসার্ট শুরুর আগে সবগুলো যন্ত্রের টিউন নষ্ট করে দেয়। হান্ডেল যেইমাত্র বাজনা শুরু করলেন কিচিরমিচির শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হলো না। একসাথে পঞ্চাশটা নষ্ট টিউনের বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠলে কি হতে পারে ধারণা করুন। হ্যান্ডেল ক্ষেপে বোম হয়ে গেলেন। রাগের মাথায় তিনি একটা বিরাট ডাবল বেস তুলে নিলেন এবং সেটা ছুঁড়ে মারলেন। তারপর একটা কেটলড্রাম তুলে সর্বশক্তি দিয়ে সেটা এক বেহালাবাদকের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। হুটোপুটিতে তার পরচুলা খসে গেল, দর্শকেরা আর চেপে রাখতে না পেরে হেসে উঠলো আর হ্যান্ডেলও পড়িমড়ি করে স্টেজ থেকে বেরিয়ে গেলেন।


রাজকীয় বিপদ

১৭৪৯ সালে হ্যান্ডেল অস্ট্রিয়ার সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে রাজকীয় আতশবাজী উৎসবের জন্য একটি গান লেখেন। এর প্রথম পরিবেশনাতেই ঘটে যায় সংগীতের জগতের এক মহা দুর্ঘটনা।

এই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে রাজা একজন স্থপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন মঞ্চের পেছনে একটা বিরাট চিত্রকর্ম তৈরি করার জন্য। সেই স্থপতি ৪০০ ফুট চওড়া এবং ১০০ ফুট লম্বা একটা চিত্রকর্ম তৈরি করেছিলেন। তার সঙ্গে ২০০ ফুট লাঠি দিয়ে বেঁধে দিয়েছিলেন এক বিরাটকায় সূর্যের ছবি।

যেদিন উৎসবের দিন এলো, হ্যান্ডেল স্বয়ং বাজনাটি পরিচালনা করতে মঞ্চে উঠেছিলেন। প্রথম অর্ধেকটা সময় সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। এরপরই শুরু হয় আতশবাজী।

হ্যান্ডেল সম্ভবত বাজনার মাঝপথে আতশবাজী ফোটার ব্যাপারটায় একটু বিরক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় যখন আতশবাজীর আগুন ছবির উপরেও এসে পড়ে। এরপর যা হবার তাই হলো, আগুন ধরে গেল মঞ্চে। উপস্থিত জনতা প্রাণভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিলো, কিন্তু হ্যান্ডেল নাছোড়বান্দার মতো বাজনা চালিয়েই গেলেন।


হ্যান্ডেলের সংগীত

হ্যান্ডেলের সংগীত বারোক ঘরানার সংগীতের অন্যতম উদাহরণ। তাঁর গানগুলো টাটকা, নৃত্যপ্রবণ এবং বেশীরভাগ সময়ই আবেগতাড়িত। হ্যান্ডেলের গতি দেখে মুগ্ধ হতে হয়। তিনি তাঁর বিখ্যাত মেসিয়াহ ওরাটরিও লিখেছিলেন যেটার দৈর্ঘ্য ছিল দুইঘন্টারও বেশী। তবুও সেটা মানুষ ধৈর্য নিয়ে শুনত, প্রতিবছর বড়দিন আর ইস্টারে সারা পৃথিবীর বড় বড় সব শহরে আজও তিন সপ্তাহ ধরে এটি বাজানো হয়।

হ্যান্ডেলের কাজ বহু। তবে তাঁর রেকর্ডিংগুলো খুঁজে পাওয়া সহজ। হ্যান্ডেলের এই সুরগুলো শোনা যেতে পারে:

 

     Messiah, an oratorio for solo singers, chorus, and orchestra

     Concerto Grosso, opus 3, no. 1‐6

     Concerto Grosso, opus 6, no. 1‐12

     Water Music, Suites 1, 2, and 3

     Royal Fireworks Music

1 টি মন্তব্য: