১৮৪৪ সালে লেখা মার্ক্সের অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক পান্ডুলিপি তাঁর আর সবগুলো লেখার থেকে একদম আলাদা, এমনকি তরুণ বয়সে তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য লেখাগুলোর মধ্যে হেগেলের সমালোচনা করে লেখা লেখাগুলোর থেকেও্। পরিণত বয়সে তাঁর লেখাগুলো ছিল প্রধানত নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে – কখনো সামাজিক বিজ্ঞান (প্রধানত অর্থনীতি) বা কখনো রাজনৈতিক ভাষ্য, আর গুটিকতক সামাজিক বিজ্ঞানের মেথডলজি। কিন্তু, মার্ক্সের অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক পান্ডুলিপি এই সবগুলো জ্ঞানকান্ড নিয়ে একসাথে আলোচনা করেছে; এটা মানুষের বৈশিষ্ট্য, এই পৃথিবীতে তার অবস্থান, তার নীতি-নৈতিকতা নিয়েও একটা তত্ত্ব হাজির করেছে। মার্ক্স পরবর্তী দার্শনিকেরা একে পৃথিবীর প্রতি মার্ক্সের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গী বলে মনে করেছেন এবং একে ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’ নাম দিয়ছেন। উল্লেখ্য, দ্বন্দ্বিক বস্তুবাদ নামটি মার্ক্স নিজে কোনোদিন ব্যবহার করেননি। মার্ক্সের পরিণত লেখাগুলোতেও কখনো কোনো বিশ্ববীক্ষা নজরে পড়েনা। তবে, অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক পান্ডুলিপিতে তা দেখা যায়। আর এই কারণেই ১৯৩০-এর দশকে এটি উদ্ধার হওয়ার পর চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়।
অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক পান্ডুলিপিতে দুটি ধারণা হাজির করেছেন মার্ক্স – বিচ্ছিন্ন শ্রম এবং মানবতা। দ্বিতীয়টি তো এখন মানবপ্রকৃতি ও তার নীতি-নৈতিকতার তত্বে এবং সেইসঙ্গে সামাজিক বিজ্ঞানের একটি মেথডলজিতে পরিণত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন শ্রমের ধারণাটি দিয়েই আলাপ শুরু করা যাক। মার্ক্স দাবী করেছেন যে –
শ্রমিককে তার পণ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার অর্থ শুধু এই নয় যে, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র শ্রম নিজেই পণ্যে অর্থাৎ কোনো বাহ্যিক বস্তুতে রূপান্তরিত হল। শ্রমিককে তার পণ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করলে সেই পণ্য মুক্ত হয়ে তার নাগালের বাইরে চলে যায় এবং তার কাছেই অচেনা হয়ে যায়। এরপর সে স্বতন্ত্র ক্ষমতা দিয়ে তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যে পণ্যে তিনি জীবন ঢেলেছিলেন সেটিই তখন তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।(Marx et al., 1992)
এর অর্থ কী? স্বাভাবিকভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, পণ্যটিতে আর শ্রমিকের মালিকানা থাকে না, মনিবের মালিকানা হয়ে যায়। কিন্তু এখানে আরও কথা থেকে যায়। পড়ে মনে হচ্ছে যেন পণ্যটির নিজের জীবন আছে এবং সে শ্রমিকের বিরুদ্ধে কাজ করছে। সাধারণভাবে আমাদের মনে হতে পারে যেন, শ্রমিককে দিয়ে এতোই কাজ করানো হয়েছে যে তিনি চাহিদার চেয়েও বেশী পণ্য উৎপাদন করে ফেলেছেন। ফলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে এবং চাহিদা না থাকার কারণে শ্রমিকও তার কাজ হারিয়েছেন। বা, মনে হতে পারে, পুঁজিপতিরা পণ্য বিক্রি করে টাকা আয় করে সেই টাকা দিয়ে এমন মেশিনপত্র কিনেছেন যাতে আর শ্রমিক পুষতে হচ্ছে না। কিন্তু, এইসব চিন্তার পাশাপাশি আরও একটা চিন্তা এখানে আছে যা মার্ক্স বুঝাতে চেয়েছেন: পণ্য হল পাগলা ঘোড়ার মত। পুঁজিবাদ এমন ক্ষমতাকে উস্কে দেয় যাকে সে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পরে না। আজ আমাদের বৈশ্বিক পরিবেশের সংকট যেভাবে মানব অস্তিত্বকে বিপন্ন করে ফেলেছে সেদিকে নজর দিলে তার প্রমাণ মেলে হাড়ে হাড়ে। মার্ক্সের সময়ে, ‘অতিরিক্ত উৎপাদনের সংকটই’ ছিল প্রধান সংকট। এই সংকট তৈরি করতো মন্বন্তর, অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে খোদ শ্রমিকই সেখানে সবার আগে মরতো।
তবে মার্ক্স এই লেখায় বিচ্ছিন্নতাকে বিশ্ব বাজারের বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখেন নাই, বরং, শ্রমপ্রণালীর বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মতে পণ্য শ্রমিকের কাছেই অধরা হয়ে যায় কারণ –
প্রথমত, শ্রম নিজেই শ্রমিকের কাছে তার সত্তার বাইরের কিছু একটা মনে হয় অর্থাৎ, তার নিত্যসত্তার অংশ হয়ে থাকে না। কাজেই সে কাজে মনতো বসাতে পারেই না, উল্টো নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং অসহায় ও অসুখী বোধ করে। তার মধ্যে মানসিক এবং শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য জাগে না, বরং স্বাস্থ্য আর মন দুটোই ভেঙে যায়। শ্রমিক শুধুমাত্র যখন কাজ করেন না তখনই নিজেকে ফিরে পান; যতক্ষণ কাজ করছেন ততক্ষণ নিজেকে খুঁজে পান না। কাজ না করলেই তার শান্তি, কাজ করলেই অশান্তি। কাজেই তার এই শ্রম স্বেচ্ছায় নয়, অনিচ্ছায়। এটাই হল জবরদস্তি শ্রম। কাজেই এই শ্রম নিজেকে তৃপ্ত করার শ্রম নয়, অন্যের চাহিদা পূরণের শ্রম।(Marx et al., 1992)
সহজ কথায় বলা যায়, শ্রমিকের সময় যেন তার নিজের সময় নয়, সেই সময়ের মালিক তার মনিব। কিন্তু, গভীরভাবে চিন্তা করলে এটা শ্রমিকেরই সময়, মালিকের নয়। শ্রম যে সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করা যায়, আলাদা করা যায় – এই ধারণার সাথে আমরা এতোই পরিচিত যে আমাদের কাছে এই নিয়ে আর খটকা লাগে না। কিন্তু লাগা উচিত। আমার সময়টা আমার মালিক দখল করেছে কারণ আমিই তাকে এটা বিক্রি করেছি। যেমনটা আমার পূর্বপুরুষেরা করেছে।
কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ নয়, আরও কিছু আছে যা মানবতার সাথে সম্পর্কিত। সেই নিয়ে আলাপ একটু পরেই শুরু করছি। শ্রমিকের শ্রম তার জীবনের চাঞ্চল্যের প্রকাশ, এবং সেটার একটা পূর্ণতা তো অন্তত থাকা চাই; কিন্তু সেটা নাই। তার বদলে মজুরি নামের এক অচেনা জিনিস হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার সাথে পণ্যের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নাই।
এই আলোচনায় বিচ্ছিন্নতার এই ধারণা মার্ক্সের পরবর্তী দুটি ধারণার স্তম্ভ হিসেবে কাজ করছে, যার প্রথমটি হল শোষণের ধারণা (Exploitation)। শোষণের ক্ষেত্রে একটা বিষয় মার্ক্স পরিষ্কার দেখিয়ে দিয়েছেন যে, শ্রমিকের শ্রম এবং পণ্য পরস্পরের বিপরীতে অবস্থান করে কারণ পণ্যটি তৃতীয় কারো হাতে কুক্ষিগত থাকে – পুঁজিপতি। আর দ্বিতীয়টি হল উৎক্রমণের ধারণা (Inversion)। উৎপাদক ও পণ্যের স্বাভাবিক সম্পর্ক হল উৎপাদক পণ্যের উপর কর্তৃত্ব করবে; কিন্তু বিচ্ছিন্নতার সম্পর্কের মধ্যে পড়ে উল্টো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। মার্ক্সের উৎক্রমণের ধারণাটি তাঁর পরিণত লেখাগুলোতেও দেখা যায়। যেমন, কমিউনিস্ট ইস্তেহারে তিনি বলছেন:
বুর্জোয়া সমাজে খুচরা শ্রম পুঞ্জীভূত শ্রমকে (যেমন: পুঁজি) বড় করার কাজে লাগে। কমিউনিস্ট সমাজে, পুঞ্জীভূত শ্রম শ্রমিকের অস্তিত্বকে আরও সুসংহত করতে কাজে লাগে।
বুর্জোয়া সমাজে তাই, শ্রমের উপর পুঁজিকে কতৃর্ত্ব করতে দেখা যায়; কমিউনিস্ট সমাজে, পুঁজির উপর কর্তৃত্ব করে শ্রম। বুর্জোয়া সমাজে পুঁজি তাই স্বাধীন এবং তার একটা ব্যক্তিত্ব থাকলেও, জীবন্ত মানুষ সেখানে অধীন এবং তার কোনো ব্যক্তিত্ব নেই।(Marx et al., 1998)
তবে অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক পান্ডুলিপিতে যেভাবে উৎক্রমণের ধারণাটি এসেছে সেটি বুঝতে হলে আমাদের মার্ক্সের মানবজাতি এবং প্রকৃতিতে তাদের অবস্থান সম্পর্কিত ধারণার সাথে পরিচিত হতে হবে। মার্ক্সের মতে কোনো পশুর স্বভাব বুঝতে হলে শুধুমাত্র সেই পশুটি কেমন সেটুকু দেখলেই চলবে না বরং সে কি উৎপাদন করে সেটিও দেখতে হবে। যেমন: আমরা পিঁপড়া নিয়ে পড়তে গেলে পিঁপড়ার বাসা নিয়েও জানতে হবে, তেমনি মানুষ নিয়ে পড়তে গেলে তার অন্যান্য দিকগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে:
মানুষের বৈষয়িকতাই প্রমাণ করে যে মানুষ একটা প্রজাতিনির্ভর-সত্তা। তার প্রজাতিবদ্ধ জীবনকে ঘিরেই উৎপাদনের সমস্ত আয়োজন। এর মাধ্যমে প্রকৃতি তার শ্রম এবং বাস্তবতার মধ্যে ফুটে ওঠে। কাজেই শ্রমের উদ্দেশ্যই হল মানবজাতির প্রজাতি-সত্তার উদ্দেশ্য পূরণ করা। মানুষ কেবলমাত্র বুদ্ধি ও চৈতন্য খাটিয়েই পুনরুৎপাদন করে না, বরং গায়ে-গতরে পরিশ্রম করেও করে। কাজেই, তার মনে হয় যেন বুঝি সে তার নিজের সৃষ্টি করা জগতে বাস করছে।(Marx et al., 1992)
ব্যাপক বিচ্ছিন্নতার পরেও আজকের হাটে-বাজারে, কলে-কারখানায় আমরা কেমন মানুষ দেখতে পাই?
মেহনতের ইতিহাস এবং তার উদ্দেশ্যের যে বিকাশ মানুষ করেছে সেখানে থেকেই তার এই অত্যাবশ্যক ক্ষমতা খোলা বইয়ের মত পরিষ্কার বোঝা যায়। বোঝা যায় মানুষের মনের ভিতরে এখনো সেসব তাজা রয়েছে।(Marx et al., 1992)
মেহনতের সম্পর্কই হল প্রকৃতির সত্যিকার সম্পর্ক, আর তাই তা মানুষের কাছে প্রকৃতির বিজ্ঞান। যদি এটুকু বোঝা যায়, তাহলে মানুষের অত্যাবশ্যক ক্ষমতা, মানুষের মানব-প্রকৃতি বা স্বাভাবিক প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা যা কিছু ধারণ করেছি সেসবও বোঝা যাবে।(Marx et al., 1992)
মার্ক্স বলছেন যে, বিদ্যমান শিল্পব্যবস্থায়, মানুষের মর্ম কেবলমাত্র বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যায়; তবে অন্তত পাওয়া যায়। কারণ জ্ঞান দিয়ে পরিবর্তন করে ফেলা আমাদের এই দুনিয়া এবং তার উৎপাদনশীল কাজকর্মের মধ্যেই আমাদের প্রজাতির সুনির্দিষ্ট কিছু সক্ষমতা প্রকাশ পেয়ে যায়। তাহলে, এখন প্রশ্ন হল আমাদের এই বৈশিষ্ট্য উন্মোচনের মাধ্যমে কেমন করে আমরা অন্যান্য প্রজাতি থেকে আলাদা হই? মার্ক্সের ভাষ্যে;
বৈষয়িক দুনিয়ার এই যে সমাহার, এর পেছনে যে অজৈব চরিত্র, এটাই হল মানুষের চেতানসম্পন্ন প্রজাতি-সত্তার প্রমাণ, যেমন: এই যে তারা অন্যান্য প্রজাতিগুলোকে নিজের বলে মনে করে অথবা, নিজেকেই আলাদা প্রজাতি-সত্তা বলে ভাবতে পারে। একথা সত্য যে পশুপাখিরাও উৎপাদন করে। তারা বাসা বাঁধে, একসাথে থাকে, যেমন মৌমাছি, বীবর, পিঁপড়া ইত্যাদি। কিন্তু তারা কেবলমাত্র তাদের আশু-প্রয়োজনটুকুই মেটায়, বড়জোড় তাদের বাচ্চাকাচ্চাদের প্রয়োজনটুকু। তারা একমুখী উৎপাদন করে, কিন্তু মানুষ উৎপাদন করে বৈশ্বিক। পশুপাখি কেবলমাত্র বাধ্য হয়ে উৎপাদন করে, কিন্তু মানুষ তার বাহ্যিক প্রয়োজনের বাইরেও উৎপাদন করে, এবং সত্যিকার অর্থেই প্রয়োজন ছাড়াও উৎপাদন করে…পশুপাখিরা তাদের নিজ নিজ প্রজাতির পক্ষে যেমন সম্ভব তেমন উৎপাদন করে, তেমনি মানুষ প্রতিটি প্রজাতির জন্য উৎপাদন করতে জানে এবং প্রতিটা কাজকেই সে নির্দিষ্ট উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। তাই মানুষ সৌন্দর্যের নিয়ম মেনেই উৎপাদন করে।(Marx et al., 1992)
শুধুমাত্র উৎপাদনে দূরদর্শিতাই আমাদের উৎপাদনের সমস্ত কথা নয়, একটি অংশ মাত্র। আমরা হাতিয়ার ব্যবহার করি, আমাদের উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করি, আমরা বিভিন্ন উপায়ে উৎপাদন করি, এবং আমাদের উৎপাদনক্ষমতার বিকাশও করি। পশুপাখিরা একই জিনিসি শত-শত বছর ধরে উৎপাদন করে যায় এবং অন্যান্য প্রজাতিগুলোর উপর নির্ভর করে। উৎপাদক হিসেবে আমাদেরও একটা ইতিহাস আছে, এবং আমরা প্রকৃতির বিভিন্ন তারতম্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েও টিকে থাকতে পারি। তর্ক উঠতে পারে যে, মানবজাতির বিবর্তন মূলত শ্রমজীবির বিবর্তন। আরও বলা যেতে পারে, মানুষের বিবর্তন এক্সোসোমাটিক, অর্থাৎ, আমরা আমাদের দেহের অতিরিক্ত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে শক্তিশালী হতে পারি। সুতরাং, আমরা আসলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের বিবর্তনকেও রোধ করে দিতে পারি, কারণ, আমরা যতো দ্রুত জিনিসপত্র তৈরি করে নিজেদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটাতে পারি, প্রাকৃতিক নির্বাচন ততো দ্রুত কাজ করতে পারে না।
যেহেতু মার্ক্স এই লেখাটি ডারউইনেরও আগে লিখেছেন, কাজেই এখানে একটু এনার্ক্রোনিস্টিক হয়েই বলতে হচ্ছে। তবে আশা করি এগুলো মূল কথাটা ধরতে সাহায্য করবে:
১. মানুষের স্বভাবকে তার উৎপাদনশীল পরিবেশের মধ্যে সহজেই চেনা যায়।
২. আমরা একটু একটু করে জমিয়ে উৎপাদন করি, অন্যান্য প্রজাতির মত বারবার নয়।
৩. যেহেতু আমরা কেমন থাকব সেটা নির্ভর করে আমাদের পরিবেশের উপর, কাজেই, পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেলে আমরাও পরিবর্তিত হব।
৪. আমরা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্যই উৎপাদন করি না, কখনো কখনো নিজেদের স্বার্থে আবার কখনো কখনো সৌন্দর্যের স্বার্থেও করি।
আর এই পয়েন্টগুলো থেকে মার্ক্স মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে দুটি সিদ্ধান্ত টেনেছেন: প্রথমত, মানব প্রকৃতির মোদ্দাকথা হল উৎপাদনশীল শ্রম: ‘কোনো প্রজাতির যাবতীয় বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ, তার প্রজাতি-বৈশিষ্ট্য তার কর্মজীবনের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে আর মুক্ত চেতনাসম্পন্ন কাজকর্মই মানুষের প্রজাতি-বৈশিষ্ট্য নির্মাণ করে।’(Marx et al., 1992) আর দ্বিতীয়ত, প্রকৃতি এবং সামাজিক পরিবেশ পরিবর্তন হয় বলেই মানুষের মনোজগতেও কালে কালে পার্থক্য হয়।
এবার আবার বিচ্ছিন্নতার প্রসঙ্গে ফেরা যাক। উৎপাদনশীল শ্রমের সাথে আমাদের যে বিচ্ছিন্নতা সেটাকে মার্ক্স সম্ভবত খুবই সূক্ষ্ণভাবে দেখেছেন। আমাদের উৎপাদনশীল কাজকর্মের মধ্যে থাকতেই ভালো লাগে, বিশেষ করে শিল্পীদের। কিন্তু, শ্রমিকরা কাজের সময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তাঁরা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বিশ্রাম নিতে।
আমরা আমাদের কর্মজীবনকে শুধুমাত্র টাকা-পয়সা আয়ের উপায় হিসেবে দেখতেই অভ্যস্থ। ভাবি আমাদের অবসর জীবন চালিয়ে নেবার সংস্থান হল এই কর্মজীবন। মার্ক্স কিন্তু বলছেন না যে আমাদের উচিত এই বিচ্ছিন্ন শ্রমকে উপভোগ করার চেষ্টা করা। বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণাটি হল, এটা বোধহয় ব্যক্তিগত কোনো ব্যাপার এবং যথাযথ পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট করে বোধহয় এটা কাটানো সম্ভব। এর চলতি নাম হল, একঘেয়ে লাগা। কিন্তু তা নয়, যদি একজন শ্রমিকের সময় এবং পণ্য দুটিই অন্যের সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলেই তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কাজটা তার ভাল লাগলেও তিনি বিচ্ছিন্নই থাকেন। বরং, মার্ক্স বলছেন যে, শ্রমের এখন যে চেহারা তার থেকে একদম ভিন্ন চেহারা হবে মানুষের উপযোগী সমাজে। শ্রমিক জানবেন যে তিনি যা উৎপাদন করেছেন সেটি তার কাজেই লাগবে। আবার একইসাথে বুদ্ধিমান এবং সৃষ্টিশীল মানুষদের জন্য উপযোগী কাজের ব্যবস্থাও করা হবে।
সৃষ্টিশীল উৎপাদন মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। সেখান থেকে মানবিকতাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের নৈতিকতার উদ্ভব হয়। এটা মানুষকে ইগো-তাড়িত করে ফেলে। সবাই সবার সঙ্গে শুধুমাত্র টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে, এটা শুধু সেরকমই একটা বার্তা দেয়; শুধু তাই না, আমাদের মূল্যায়ন করার সহজাত ক্ষমতাও নষ্ট করে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত চেনাজানা মানুষদের মধ্যকার সম্পর্কগুলো নষ্ট করে।
ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা আমাদেরকে এতোই বেকুব আর একচোখা করে দিয়েছে যে আমাদের খালি মনে হয় কোনো জিনিস আমাদের করায়ত্তে আসলেই সেটা আমাদের হয়ে যায়। সেটা আমাদের পুঁজি হিসেবে থাকলেই বা আমাদের দখলে থাকলেই কিংবা যা আমরা খেতে, পান করতে, পড়তে, অভ্যাস করতে পারি, এককথায়, ব্যবহার করতে পারি তাই বুঝি আমাদের।(Marx et al., 1992)
খনির ব্যবসায়ী খালি ব্যবসায়িক স্বার্থ খোঁজে, খনিজের সৌন্দর্য বা বৈশিষ্ট্য নয়; তার চাই কেবল খনির মজুর – যার সেই অনুভূতি নাই।(Marx et al., 1992)
কাজ যেমন আমাদের চরিত্র এবং আমাদের সৃষ্ট দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত, তেমনি আমাদের অনূভুতিকেও সেই বস্তুগত দুনিয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। বস্তুকেন্দ্রীক সেইসব অনুভূতিকে গ্রাস না করে ধারণ করাটাই মার্ক্সের মতে, বিচ্ছিন্ন করে ফেলা না হলে, আমাদের জন্য স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হত। কারণ, চরিত্র ‘অজৈব বস্তু’(Marx et al., 1992)। অজৈব বস্তু হওয়ার কারণে, আমাদের জীবনের জন্য এটি দরকার এবং এর যত্ন নেওয়াও দরকার।
মানব চরিত্র এবং মার্ক্স নিয়ে দুটি কথা প্রায়ই শোনা যায়: ১. তিনি নাকি মানব চরিত্রের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করেননি এবং এই কারণেই তার সমস্ত তত্ত্ব নাকি দুর্বল হয়ে গেছে; এবং ২. তিনি মানব চরিত্রে বিশ্বাসই করতেন না। এবার এই বিষয়দুটো দেখা যাক।
যারা বলেন যে মার্ক্স নাকি মানব চরিত্রকে উপেক্ষা করে গেছেন তাদের মতে ‘মানব চরিত্রের’ সংজ্ঞা হল ইগোকেন্দ্রীকতা, স্বার্থপরতা। মার্ক্স অস্বীকার করেননি যে বিদ্যমান পুঁজিবাদী সমাজে বেশীরভাগ মানুষই বড্ড বেশী ইগোতাড়িত। যেহেতু তাদেরকে টিকে থাকতে হলে তার পাশের মানুষটাও পরাজিত করতে হয়, কাজেই তারা এমন হতে বাধ্য। পুঁজিবাদী সমাজের দিকে তাকিয়ে মানব চরিত্র স্বার্থপর বলাটা পুঁতিগন্ধময় কারখানার শ্রমিকদের দিকে আঙ্গুল তুলে বলা যে, কাশিই হল মানব চরিত্রের মত ব্যাপার। মানব চরিত্র নিয়ে মার্ক্সের দৃষ্টিভঙ্গীর মোদ্দাকথা হল, আমরা নিজেদের পরিবেশের পরিবর্তন করার মাধ্যমে নিজেদেরও পরিবর্তন করি। কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে মানুষ কেমন আচরণ করবে সেটা বুঝতে হলে দুইটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে: সাধারণ মানব চরিত্র এবং যেভাবে কোন নির্দিষ্ট পরিবেশ সেই চরিত্রের উপর প্রভাব রাখবে। যেমনটা মার্ক্স উপযোগবাদী দার্শনিক জেরেমি বেনথামের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন:
কুকুরের জন্য কোনটা দরকারি সেটা জানতে গেলে মানুষকে কুকুরের স্বভাব জানতে হবে। এই স্বভাব শুধুমাত্র উপযোগের তত্ত্ব থেকে জানা যাবে না। একই কথা মানুষের বেলায়ও খাটিয়ে যিনি মানুষের চালচলন, সম্পর্কসহ যাবতীয় কাজকর্মকে বিচার করতে যাবেন উপযোগীতার নীরিখে, তাকে সবার আগে মানুষের সাধারণ চরিত্রের ব্যাপারে তো অন্তত জানতে হবে, এবং তারপর জানতে হবে মানুষের স্বভাব কালের বিবর্তনে কতোটা বদলেছে। বেনথাম এসবকিছু করার চেষ্টাও করেন না। কাঠখোট্টা সরলতার সঙ্গে তিনি অনুমান করেছেন যে আধুনিক পাতি-বুর্জোয়া সমাজ, বিশেষ করে ইংরেজ পাতি-বুর্জোয়া সমাজের লোকেরাই হলেন স্বাভাবিক মানুষ।(Marx et al., 1981)
অবশ্যই কোনোকিছুর স্বভাব বলতে সবসময় সেইসব বিষয়গুলোকে বোঝায় না যেগুলো খালি চোখে দেখা যায়, বরং বিভিন্ন পরিবেশে কোন বিষয়গুলো ধরা পড়বে আর কোনগুলো পড়বে না সেটাকেই বোঝায়। শুন্য থেকে একশ ডিগ্রী সেলিসিয়াস তাপমাত্রায় পানি তরল থাকে, এটা সেরকম বিষয় নয়। এটা মানুষের ইগোকেন্দ্রীকতাও নয়; এটা হল এমন একটা সমাজের সাপেক্ষে তাদের ইগোতাড়িত হওয়ার বিষয়, যেখানে পাশের মানুষটার ক্ষতি করলে নিজে বাঁচা যায়। বাজার অর্থনীতির বাইরে, উৎপাদনশীল শ্রমের মধ্যে আনন্দ বলতে আজও মানুষ অপরকে আনন্দ দেওয়াই বোঝে। কেউ খাবেনা জানলে রাঁধুনী যেমন রান্না করে কোনো আনন্দ পান না।
মানব চরিত্রের এই ধারণার সঙ্গে হব্সের ধারণারও সংঘর্ষ হয়। হব্সের মতে মানুষের ক্ষমতার প্রতি অসীম লোভ রয়েছে এবং এই লোভ সবসময় তাদেরকে ‘একে অপরের বিরুদ্ধে’ বারবার যুদ্ধে উৎসাহিত করবে যদি সেখানে শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ না থাকে। হব্স যদি সঠিক হন মার্ক্স তবে ভুল, তাহলে মার্ক্স প্রায়ই যে আধুনিক কমুনিজমের কথা বলেন, যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন হবে এবং কোনো রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব থাকবে না, সেটা অসম্ভব হয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা হল পুঁজিবাদী সমাজে যারা হব্সের মতোই চিন্তা করেন তাদের ধারণা তারা চিরকাল এইরকম সমাজেই থাকবেন। এটা মার্ক্সকে মোটেও বিচলিত করেনা, বরং, বিদ্যমান পরিবেশে মানুষের স্বভাব কেমন হতে পারে সেটারই মার্ক্সের সপক্ষে প্রমাণ দেয়।
এটা সেইসব মার্ক্সবাদী যারা বলেন যে মার্ক্স মানব চরিত্রে বিশ্বাস করতেন না, তাদের জন্যও একটা উত্তর। তারা সাধারণত বলতে চান যে, তিনি মনে করতেন মানুষ সব সমাজে সমান হয় না। তিনি মানব চরিত্রে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু এও মনে করতেন যে, বিভিন্ন ধরণের সমাজে বিভিন্ন ধরণের মানুষ থাকাটাও মানব চরিত্রেরই অংশ।
অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক পান্ডুলিপির ৩৬২-৩৬৩ পৃষ্ঠায় মার্ক্স প্রশ্ন তোলেন মানুষের বেচাকেনা আইনসঙ্গত কিনা? মার্ক্স দেখেন যে, পুঁজিবাদী সমাজ যতোটা আবেগতাড়িত, তার অর্থনীতি ঠিক ততোটাই অনৈতিক। তিনি আরও লক্ষ্য করেন যে পুঁজিবাদের সঙ্গে মানানসই এক ধরণের নৈতিকতা রয়েছে:
এটা সত্য যে নৈতিকতা হল সন্ন্যাসব্রতের মত কিন্তু প্রবল কৃচ্ছতাসাধনও, আবার সন্ন্যাসব্রতের মত কিন্তু উৎপাদনশীল দাসের মতোও…আত্মসত্তাকে উপেক্ষা করা, জীবনকে উপেক্ষা করা এবং যাবতীয় মানবিক প্রয়োজনকে উপেক্ষা করাই এর প্রধান মতাদর্শ। যতো কম খাবেন, বইপত্র কিনবেন, থিয়েটারে যাবেন, নাচবেন, পান করবেন, চিন্তা করবেন, ভালোবাসবেস, তত্ত্বে বাঁধবেন, গাইবেন, আঁকবেন, তলোয়ারবাজি করবেন ততোই আপনার সঞ্চয় বাড়বে এবং ততোই আপনার ধনরত্নের বাড়বাড়ন্ত হবে কিন্তু সেই ধন কেউ উপভোগ করতে পারবে না, আর সেই ধনের নামই পুঁজি। যতো কম সঞ্চয় করবেন ততোই জীবনকে উপেক্ষা করা যাবে, যতো বেশী সঞ্চয় করবেন, ততোই বাড়বে আপনার বিচ্ছিন্ন জীবন এবং ততোই বাড়তে থাকবে আপনার বিচ্ছিন্ন জীবনের ভাঁড়ার।(Marx et al., 1992)
এখানে পুঁজিবাদী সমাজগুলোর চালচলনের যেসব ভিত্তি রয়েছে তারই দুটি পরস্পরবিরোধী নৈতিক দর্শন কেমন করে সেই সমাজগুলোতে জেঁকে বসেছে তা দেখা যাচ্ছে এখানে। একদিকে রয়েছে উপযোগবাদ, যা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ক্রিয়াকর্মকে উপেক্ষা করে বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে আনন্দ পাওয়াকেই মানুষের কাজের লক্ষ্য বলে মনে করে। ঠিক যেমনটা বিচ্ছিন্ন শ্রম থেকে আনন্দ পাবার উপায় হল মজুরি পাবার আনন্দ। এর বিরুদ্ধে মার্ক্স জোর দিয়ে বলছেন, সত্যিকার মানবিক পরিবেশে মানুষের কাজকর্মই তার আনন্দ জোগানোর পক্ষে যথেষ্ট, এরজন্য আলাদা কোনো উপায়ের প্রয়োজন হবে না। আর এইসব কাজকর্ম গভীরভাবে সামাজিক প্রকৃতির, কোনো ইগোকেন্দ্রীক বিষয় নয়।
অপরদিকে রয়েছেন কান্ট, প্রাক-পুঁজিবাদী সমাজের প্রায় সকল দার্শনিকের মত তিনি আনন্দ পাওয়াটাই নৈতিক বলে মনে করেননি। বরং, আমাদের নিজের স্বার্থেই আনন্দের আতিশয্য দমন করতে হবে বলে তিনি মনে করতেন। এই নৈতিকতা মার্ক্সের ‘নৈতিকতা সন্ন্যাসব্রতের মত হলেও উৎপাদনশীল দাসের মতোও’ কথাটি মনে করিয়ে দেয়।
‘সত্যিকার মানবিক পরিবেশ’ বলতে আমি অবশ্যই কমিউনিজমের কথা বলছি। কিন্তু কমিউনিজম মানে আদিতে ছিলো ‘সর্বজনীন ব্যক্তিগত সম্পত্তির’ ধারণা(Marx et al., 1992, P.346)। এই কথা বলে মার্ক্স সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন যে, সামাজিক মালিকানা ব্যক্তিগত মালিকানার বদলে চালু হলেও, তাতে মালিকের (এক্ষেত্রে সমাজ) সঙ্গে সম্পত্তির সম্পর্ক সেই পুরাতন ব্যক্তিগত মালিকানার সম্পর্কই থেকে যায়। এই সম্পর্কও দখলে রাখারই সম্পর্ক। মার্ক্স বলেন, ‘এর ফলে যা কিছু সবার পক্ষে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দখলে রাখা সম্ভব না সেসব বলপ্রয়োগের হুমকির মুখে পড়ে, এর মধ্যে রয়েছে মেধা থেকে শুরু করে সমস্তকিছু’ (Marx et al., 1992), P.346)। এইরকম ‘অসভ্য এবং অচিন্তনীয়’ কমুনিজম ‘সবকিছুরই অবনতি ঘটায়’ এবং ‘সমস্ত পৃথিবীর সংস্কৃতি এবং সভ্যতাকে’ ধ্বংস করে দেয়। এখানে বিয়ে নারীকে ‘সামাজিক সম্পত্তি’ আর ‘সামাজিক রিরংসার শিকার এবং দাসীতে’(Marx et al., 1992) পরিণত করে। মার্ক্স আরও বলেন, কোনো সমাজে নারী ও পরুষের সম্পর্ক কেমন সেখান থেকেই সেই সমাজে মানবতার অবস্থা সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়।
কাজেই [এই সম্পর্কই] বলে দেয় মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি কতোটুকু মানবিক হতে পেরেছে বা অন্যভাবে বললে তার মানবীয় নির্যাস কতোটুকু স্বাভাবিক নির্যাসে মিলেমিশে গেছে, কতদূর পর্যন্ত মানবিক প্রবৃত্তি মানুষেরও প্রবৃত্তি হয়ে উঠেছে। এই সম্পর্ক আরও বলে দেয় কতদূর পর্যন্ত মানুষের ব্যক্তিগত চাহিদা মানবিক চাহিদায় পরিণত হয়েছে, সেইসূত্রেই অপর মানুষটিও নিজের কাছে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কতদূর পর্যন্ত মানুষের ব্যক্তিগত অস্তিত্বও যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে তার সামাজিক অস্তিত্বও।(Marx et al., 1992, P.347)
এই অসভ্য কমিউনিজমের বিপরীতে মার্ক্স একটা আদর্শ কমিউনিজমের ধারণা হাজির করেছিলেন। এটির ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা হল যাবতীয় বিচ্ছিন্নতার ইতিবাচক অবদমন এবং মানুষের ধর্ম, পরিবার, রাষ্ট্র ইত্যাদির কাছ থেকে মানবিকতায় তথা সামাজিক অস্তিত্বে উত্তরণ’(Marx et al., 1992, P.349)।
যদিও মার্ক্স মানবিক কমিউনিজম নিয়ে বিস্তর লিখেছেন, কিন্তু তবুও তিনি এর কোনো পরিষ্কার ধারণা দাঁড় করাতে পারেননি। তিনি শুধু বলেছেন মানুষের যাবতীয় কাজকর্ম শুধুমাত্র মানবিকতা অর্জনের লক্ষ্যেই হবে এবং সবকিছুই সামাজিক ভিত্তিতে হবে, এমনকি বৈজ্ঞানিক কাজকর্মের বেলায়ও তাই হবে (মানে তত্ত্বীয় বিষয়াশয়ও) যেগুলো এতোদিন একাকী করতে হয়েছে। তাছাড়া, বস্তুর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটাও মালিকানার সম্পর্ক হবে না। বর্তমানে আমাদের যে অবস্থা তাতে আমরা দেখি. ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা আমাদেরকে এতোই বেকুব আর একচোখা করে দিয়েছে যে আমাদের খালি মনে হয় কোনো জিনিস আমাদের করায়ত্তে আসলেই সেটা আমাদের হয়ে যায়। সেটা আমাদের পুঁজি হিসেবে থাকলেই বা আমাদের দখলে থাকলেই কিংবা যা আমরা খেতে, পান করতে, পড়তে, অভ্যাস করতে পারি, এককথায়, ব্যবহার করতে পারি তাই বুঝি আমাদের’(Marx et al., 1992, P.351)। কমিউনিজমের অধীনে, ‘উপভোগের পেছনে ইগোর তাড়না দূরীভূত হবে এবং কেবলমাত্র মানুষের ব্যবহারের জন্যই সবকিছু এমন ধারণারও অবসান হবে।‘(Marx et al., 1992)
যদিও বর্তমান পরিস্থিতির বিপরীতে না হলেও, কমিউনিজমকে ইতিবাচক মানবতাবাদ হিসেবে উপস্থাপনের পরেও আসলে এই বৈপরীত্যের মধ্যেই ধারণাটার স্থায়ীত্ব মূর্ত হয়েছে। তাঁর পরবর্তী লেখাগুলোতে তিনি একে একটা মান হিসেবে দেখেছেন: আমরা বড়জোড় বলতে পারি কোন কোন বিষয়ের অবসান চাই, কিন্তু সেগুলোকে কোন কোন বিষয় প্রতিস্থাপন করবে সেটা অবশ্যই সেই সময়ের মানুষের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
যাহোক, মার্ক্স তাঁর পান্ডুলিপিগুলোতে বারবার একটা সিদ্ধান্তেই এসেছেন এবং সেটাই তিনি সারাজীবন বলে গেছেন। সেটা হল, পুঁজিবাদ শ্রমিকদের শোষণ করে; এটা উৎপাদক এবং পণ্যের মধ্যকার সম্পর্ককে উল্টে দিয়ে পণ্যকেই উৎপাদকের উপর কর্তৃত্বশীল করে তোলে। আর এই সমস্যার সমাধান হল উৎপাদনের উপকরণের উপর যৌথ মালিকানা কায়েম করা। তবে, তিনি এই পান্ডুলিপিগুলোর কোনোটাই প্রকাশযোগ্য হওয়ার মত পর্যায়ে নিয়ে যাননি, এমনকি সমস্ত ধারণাকে তাঁর প্রকাশিত লেখায় নির্বিচারে ব্যবহারও করেননি। ‘বিচ্ছিন্নতা’, ‘মানবিক নির্যাস’ এবং ‘প্রজাতি-সত্তার’ মত ধারণাগুলো হারিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে ‘পুঁজিবাদী উৎপাদনব্যবস্থা’, ‘উব্দৃত্ত মূল্য’ এবং ‘শ্রেণী সংগ্রাম’ এসেছে। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি তাঁর নিজের পুরোনো তত্ত্বগুলোর সমালোচনাও করেছেন খোলাখুলিভাবে। যেমন, কমিউনিস্ট ইস্তেহারে তিনি পরিণত ফরাসি লেখাগুলো নিয়ে জার্মান সমাজতন্ত্রীদের দার্শনিক দৈন্যের সমালোচনা করে বলেন:
মূল ফরাসির তলে তারা লিখল তাদের দার্শনিক ছাঁইপাশ। উদাহরণস্বরূপ, মুদ্রার অর্থনৈতিক ক্রিয়ার ফরাসি সমালোচনার তলে তারা লিখল ‘মানবতার বিচ্ছেদ’; বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ফরাসি সমালোচনার নিচে লিখে রাখল ‘একে পুরোপুরি বাদ দাও’ এবং এইসব….ফরাসি সমাজতন্ত্রি ও কমিউনিস্ট রচনাগুলিকে এইভাবে পুরোপুরি নির্বীর্য করে তোলা হল। জার্মানদের হাতে যখন এই সাহিত্যগুলো এক শ্রেণীর সঙ্গে অপর শ্রেণীর সংগ্রামের অভিব্যক্তি হয়ে আর রইলো না, তখন তাদের ধারণা হল যে, ‘ফরাসি একদেশদর্শিতা’ বোধহয় অতিক্রম করা গেছে। সত্যকে নয়, বরং প্রকাশ করা গেছে সত্যের প্রয়োজনকে, শুধুমাত্র প্রলেতারিয়েতের নয়, বরাং মানব প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করা গেছে, যে মানুষের শ্রেণী নাই, বাস্তবতা নাই, যার অস্তিত্ব কেবল জটিল দার্শনিক হেঁয়ালিতে।’ (Marx et al., 1998, P.52)
তাহলে, লুই আলথুসার প্রশ্ন তোলেন, তরুণ মার্ক্স এবং পরিণত মার্ক্সের মধ্যে কি বিরাট পার্থক্য রয়েছে?(Althusser, 2005) আমার মনে হয় একটা বড় পরিবর্তন তো আছেই, কিন্তু তিনি সবকিছু বাতিল করে দেননি। যেমন, মুদ্রা নিয়ে মার্ক্সের যে মন্তব্য, ‘পৃথিবীব্যাপী মানুষ ও জনগণের দালাল’(Marx et al., 1992, P.377) তা কমিউনিস্ট ইস্তেহারেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে এভাবে, বুর্জোয়ারা ‘ব্যক্তিগত মূল্যকে বিনিময় মূল্যে রূপান্তর করেছে’(Marx et al., 1998, P.33)। এইরকম আরও অনেক কথা তাঁর অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনায় পাওয়া যায়। তেমনি, মালিকানার প্রকৃতি নিয়ে সমালোচনা দেখা যায় পুঁজি’র ৩য় খন্ডে যেখানে তিনি বলছেন যে, এমনকি সমস্ত মানবজাতিও পৃথিবীটার ‘মালিক’ নয়, তবে প্রতিটি প্রজন্মই পৃথিবীটাকে যে অবস্থাতেই পাক না কেন, তাদের সেটাকে বাসযোগ্য করে রেখে যেতে হবে (Marx et al., 1981, P.911)। আর যেমনটা বলছিলাম, শ্রমিকদের সাথে পুঁজিবাদের আচরণ আর উৎপাদক-পণ্যের সম্পর্ক উল্টে যাবার ধারণাটা তাঁর পরবর্তী লেখাগুলোতেও ছিল।
আরও কিছু সমস্যা মার্ক্সের তরুণ বয়সের লেখায় রয়েছে তবে সেগুলোর জন্য তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না, কারণ তিনি সেই লেখাগুলো প্রকাশ করতে চাননি।
প্রথমেই, পদ্ধতির প্রশ্ন আসে: সামাজিক বিজ্ঞানের মনোযোগ কোনদিকে হওয়া উচিত? একটা পুরোনো লেখা থেকে উদ্বৃতি দিলে তরুণ মার্ক্সের দৃষ্টিভঙ্গীটা বোঝা যাবে: ‘র্যাডিকাল হওয়া মানে শিকড়কে আরও আঁকড়ে ধরা, কিন্তু মানুষের শিকড় খোদ মানুষই’ (Althusser, 2005, P.226)। মানবজাতিই অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক পান্ডুলিপির মূল কেন্দ্রীয় বিষয়। বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এবং অনুকূল অবস্থায় মানবজাতির দশা কেমন হয় সেটাই এর মূল বিষয় হলেও, উৎপাদনের উপায়ের বৈচিত্র – যেমন, পুঁজিবাদের সাথে সামন্তবাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। জমিদার আর পুঁজপতিদের পারস্পরিক মন্তব্যগুলোকে মাথায় রেখে মার্ক্স সামন্তবাদ এবং পুঁজিবাদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার যতো কাছাকাছি যান(Marx et al., 1992, P.338-9) ততোই দেখেন: পুঁজিবাদীরা জমিদারদের অলস, মূর্খ ও বোকা মনে করছে, অপরদিকে, জমিদাররা পুঁজিপতিদের মনে করছে নিষ্ঠুর অর্থলোভী যারা সমস্ত সামাজিক বন্ধন নষ্ট করে দিচ্ছে – আর মার্ক্সের মতে দুই পক্ষের কেউই মিথ্যা বলছেন না।
শুনে মনে হয় যেন মানবজাতি হল ইতিহাসের দাস, এবং সে নিজেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে যেন বিচ্ছিন্ন করাই তার কাজ। অথচ এগুলো সবই মানুষের একে অপরের উপর কর্তৃত্ব এবং যেসব কাঠামো এই কর্তৃত্বের সুযোগ তৈরি করে দেয় সেগুলোর বিষয়। মার্ক্সের অনেক পরের একটা লেখায় তিনি এই চিন্তাপদ্ধতির একটা বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন: ‘আমার বিশ্লেষণের পদ্ধতির মূলে মানুষ নয়, বরং, কোনো সুনির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক যুগের মানুষ’ (quoted by Althusser, 2005, P.219)। মার্ক্সের পরিণত বয়সের লেখাগুলোয় এর সত্যতাও মেলে। তিনি আর কখনো নারী ও পুরুষের সাধারণ আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে লেখেননি, কিন্তু শ্রমিক হলে বা পুঁজিপতি হলে তাদের আচরণ কেমন হয় সেটা নিয়ে লিখেছেন। এতে তাঁর লেখার সুনির্দিষ্টতা এবং যথার্থতা বেড়েছে।
মানুষের নৈতিকতার দিক দিয়ে চিন্তা করলে এর একটা নৈতিক দিকও রয়েছে। মার্ক্সের তরুণ বয়সের মানবতার ধারণা আমাদের মানুষ হিসেবে যেসব পরিচয় রয়েছে সেসবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক (যেমন, ফরাসি লোক, ছুতার, স্বামী এইসব) এবং তা মানবতাকে সামগ্রীকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে – এমনকি বলে যে, আমরা আসলে ওইসব পরিচয়ের মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। কিন্তু কেউ হয়তো বলবেন (হয়তো হেগেলই বলতেন): আমার ধর্ম, পরিবার, রাষ্ট্র এইসব মিলিয়েই আমার সামাজিক অস্তিত্ব, এর মধ্যেই আমি নিজেকে তৃপ্ত মনে করি। আসলে, মার্ক্স নিজেই জার্মান ভাবাদর্শে এই নিয়ে ঠাট্টা করে লিখেছেন:
নাম নিয়ে যে ঝগড়াটা লেগেছে তা মানবতায় এসে মিটমাট হয়ে যাবে; তখন কেবা কমিউনিস্ট, কেবা সমাজতন্ত্রী? আমরা মানবজাতি – সবাই ভাই, সবাই বন্ধু…কেবা মানবজাতি, কেবা পশু, কেবা গাছপালা আর কেই বা পাথর? আমরা সবাই বস্তু! (Marx et al., 1972)
মানবতাবাদী আদর্শ নিয়ে আরেকটা বিষয় আছে। মার্ক্স হয়তো সঠিক যে মানুষকে তার সৃষ্টিশীল শ্রমই আর সবার থেকে আলাদা করেছে। কিন্তু আমরা অন্যান্য পশুপাখিদের সঙ্গে কি কি ভাগাভাগি করে নেই তার চেয়ে কিসে মানুষ অন্যান্য পশুপাখির চেয়ে আলাদা হয়েছে এই প্রশ্নটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল কেন? ধরে নেওয়া যাক যে সৃষ্টিশীল কাজ করা আনন্দদায়ক, এবং একটা অনুকূল সমাজে সেটা নিশ্চয়ই এখনকার চেয়েও ভাল হবে, তাহলে সেখানে কি নিষ্ক্রিয় থাকার আনন্দের কোনো স্থান নেই? পল লাফার্জ একবার দ্য রাইট টু বি লেজি নামের একটা বই লিখেছিলেন। সমাজতন্ত্র কি এই অধিকারটির কথা বিবেচনা করবে না?
সবশেষে, যদিও তরুণ মার্ক্সের মধ্যে এক ধরণের পরিবেশবাদী চিন্তা ছিল, তবে সেসব মানুষকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে: আমাদের উচিত প্রকৃতির যত্ন নেওয়া কারণ এটা আমাদের অজৈব সত্তা; আমাদের প্রকৃতি সম্পর্কে অ-উপযোগবাদী চিন্তাগুলোর ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে কারণ তা না হলে আমাদের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে যাবে। এই নিয়ে তর্ক আছে যে, মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হল, আমাদের নিজেদের শরীরের উপর নিজেদের অনেক অধিকার রয়েছে, অন্যকিছুর উপর এতোটা অধিকার নাই। আমি আমার চুল যখন খুশী কেটে ফেলতে পারি, কিন্তু আমি চাইলেই একটা আস্ত বন উজাড় করে দিতে পারিনা।
গত চল্লিশ বছর ধরে, অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক পান্ডুলিপি মার্ক্সের অন্যান্য লেখার তুলনায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেখা। আধুনিক মানুষের কাছে এটা অবশ্যই চিন্তার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে আজকের আধুনিক দুনিয়াতেও এটা প্রাসঙ্গিক কিনা। আজকের জামানার শিল্পকারখানাগুলোর শ্রমিকদের অবস্থার সঙ্গে পুঁজি’র যে বর্ণনা রয়েছে তা আর যায় না: কোন দেশেই বা এখনো মানুষের শুধুমাত্র একটাই চাহিদা রয়েছে – খাদ্যের চাহিদা, শুধু আলু খেয়ে থাকার দশা আরও নির্দিষ্ট করে বললে, সবচেয়ে খারাপ আলুটা খেয়ে বাঁচার দশা রয়েছে?
তবুও, মার্ক্স বিচ্ছিন্নতার যে সংজ্ঞা দিয়েছেন – একজনের সময় অপরজন চুরি করে নিচ্ছে, একজনের পণ্য আরেকজনের সর্বনাশ করছে, কাজকে শুধুমাত্র মজুরির নীরিখেই মাপা হচ্ছে – এসবই এখনো চলছে। অবিচ্ছিন্ন কাজের দুয়েকটা যা ছিঁটেফোঁটা – যেমন, ছবি আঁকা, পরিবারের জন্য রান্না করা, যেখানে কোনো বড়কর্তা নাই, যার উপকরণগুলো দখলে রাখা যায়, এবং অর্থ নয়, বরং, অপরের আনন্দের জন্যই যা উৎপাদন করা হয়, - সেসবও কমে আসছে। শিল্প এখন ডিজাইন মার্কেটের অংশ, রান্নার জায়গায় তৈরি খাবার জায়গা করে নিয়েছে। শিক্ষা শুধুমাত্র মূল্যায়ন নির্ভর হয়ে পড়েছে, এবং সবচেয়ে অসৃষ্টিশীল ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এমনকি, বিশ্ববিদ্যালয়েও যদি বলা হয়, জানার নিজেরই একটা মূল্য আছে, তাহলে নিজেকে উপহাসের পাত্র মনে হয়। সম্প্রতি ফরাসি সোশালিস্ট পার্টি যে পার্থক্যটা ধরিয়ে দিয়েছে সেটাই এক্ষেত্রে খাটে, আমরা শুধুমাত্র বাজার অর্থনীতিতেই প্রবেশ করিনি, বাজার সমাজেও প্রবেশ করেছি। এমনকি বিয়েকেও একটা চুক্তি হিসেবেই দেখা হয়। এইরকম মতাদর্শগত অবস্থা, যেখানে ব্যবসার উদ্যম সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেখানে মানবতার পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে তরুণ মার্ক্সের ক্রোধ বরাবরের মতোই যথার্থ।
মূল: ডেভিড কোলিয়ার
ভাবানুবাদ: ইয়ামিন রহমান ইস্ক্রা
Althusser, L., 2005. For Marx, Radical thinkers. Verso, London ; New York.
Marx, K., Engels, F., Arthur, C.J., Marx, K., 1972. The German ideology, New World paperbacks, NW-143. International Publishers, New York.
Marx, K., Engels, F., Engels, F., McLellan, D., 1998. The Communist Manifesto, Reissued. ed, Oxford world’s classics. Oxford University Press, Oxford.
Marx, K., Fowkes, B., Fernbach, D., 1981. Capital: A Critique of Political Economy, v. 1: Penguin classics. Penguin Books in association with New Left Review, London ; New York, N.Y.
Marx, K., Livingstone, R., Benton, G., 1992. Early writings, Repr. ed, Penguin classics. Penguin Books, London.